
Mojaru
শুরু হয়ে গেছে কোরআন নাজিলে মাস, সিয়াম সাধনার মাস রমজান। সারা দিনের কর্ম ব্যবস্তায় যেন আমরা আমাদের এই সময়ের আমলগুলো ভুলে না গিয়ে যথাযথ ভাবে পালন করতে পারি সে দিকে খেয়াল রাখা আমাদের প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব। আল্লাহ তা'আলা পুরো রমজান মাসব্যাপী মুসলমানদের প্রতি রোজা রাখা ফরজ করে দিয়েছেন। এই রোজা সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআন শরীফে বলেন- "হে বিশ্বাসীগন! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন উহা তোমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। "
এই রোজার মধ্যে দুইটি ফরজ আদায় হয়ে থাকে, একটি আল্লাহর হুকুম ফরজ রোজা রাখা এবং দ্বিতীয়টি রোজার নিয়ত করা অতএব প্রত্যেক আকেল বালেগ সুস্থ মুমিন বান্দাকে রোজা রাখবার জন্যে সচেতন থাকতে হবে।
রোজা সম্পর্কে হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন - "যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাস ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আকাঙ্ক্ষায় রমজান মাসের রোজা রাখবে সেই ব্যক্তি গুনাহ হতে এমনিভাবে নিষ্পাপ হয়ে যাবে যেমনিভাব মাতৃউদর হতে জন্ম হবার পরে নিষ্পাপ ছিল।
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্নিত " আল্লাহ রাসুল সাঃ বলেছেন কেউ যদি শরয়ী কোনো ওযর এবং অসুস্থতা না থাকা সত্ত্বেও রমযানের কোন একটি রোজা না রাখে তবে সারাজীবন রোজা রাখলেও তা আদায় হবে না। রোজার প্রকৃত হাকীকত এবং তাৎপর্য হচ্ছে খোদাভীতি ও হৃদয়ের পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা তাকওয়া হচ্ছে হৃদয়ের এক বিশেষ অবস্থার নাম। রোজা যাতে অন্তঃসারশূন্য আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত না হয়, তা যেন একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির ইদ্দেশ্যেই পালন করা হয়। এজন্য আল্লাহর রাসুল সা. রোজার সাথে ঈমান ও ইহতিসাব তথা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ এবং উত্তম বিনিময় পাবার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন "যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে তার অতীতের সকল পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
বস্তুত যে রোজা আল্লাহর ভয়ও হৃদয়ের পবিত্রতা শূন্য যে রোজা যেন মূলত কোন রোজাই নয়। আল্লাহর কাছে এরূপ রোজার গুরুত্ব নেই। রোজাকে প্রাণবন্ত করতে হলে যেমনিভাবে জিহ্বার হেফাজত দরকার অনুরূপভাবে চোখ কান এবং অন্যান্য অঙ্গ- প্রত্যঙ্গের হিফাযতও তেমনি প্রয়োজন। রোজার কাঙ্খিত ফলাফল পাবার জন্য অন্যতম শর্ত হল হালাল দ্রব্য খাওয়া। পক্ষান্তরে হারাম বস্তু খেয়ে রোজা রাখলে এতে নফসের পাশবিকতা দমার পরিবর্তে তা আরো প্রবল হয়ে উঠবে। সুতবাং রোজার পূর্ব প্রতুস্তি হিসেবে এখনই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন আমাদের সব কিছুই যেন হালাল উপার্জন ও হালাল খাবার হয়।
এই রমজানে যে বিষয়গুলোর দিকে আমাদের খেয়াল রাখা উচিৎ-
১.বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়তে পারি, কেউ যদি মনে করেন যে রোজা রাখলে এমনিতেই আমার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। ব্যাপারটা তেমন নেয় বরং আগে থেকে তওবা ইস্তিগফার করে রমজানের যাবতীয় কল্যাণ লাভে নিজেকে প্রস্তুত করা জরুরি।
২. রমজানের উপকারিতা স্মরণ করে পবিত্রতার সাথে সমস্ত রোজা পালন করার নিয়ত করতে হবে।
৩. মনে রাখতে হবে রমজান মাস পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস, ইবাদত বন্দেগীর মাস; তাই আমরা এখনই নিয়ত করে ফেলি যে শুধু রমজান নয় সারা বছরই কোরআনের সুন্নাহ মেনে চলি আর বেশি বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করি। হোক না সেটা আজ থেকেই শুরু।
৪. জীবনের সকল গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের আশায় আমরা তাহাজ্জুদ নামাজে মনোনিবেশ করতে পারি। যেহেতু রমজান মাসের এক রাকায়াত নফল নামাজ ফরজ নামাজের সমান তাই রাত জেগে শুধু রান্না কিংবা মোবাইল নয়; যেন সময় করে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারি। যাদের রাতের বেলা ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়তে সমস্যা হয় তারা এখন থেকেই প্রাকটিস শুরু করতে পারি।
৫. রমজান মাসের শুরুতেই ফরজ রোজার নিয়ম কানুনগুলো জেনে নেয়া জরুরি। সর্বোপরি রমজান হচ্ছে তিলাওয়াত, যিকর এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক বিশেষ মৌসুম। আত্মিক উৎকর্ষ ও পরকালীন কল্যান লাভের এক বেহেস্তী সওগাত এই রমজান মাস। তাই রহমত, বরকত ও কল্যানের এই মাসে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সঠিক ভাবে পবিত্রতার সাথে রোজা পালন ও ইবাদত করার তৈফিক দান করুন আমিন
মাসুমা ইয়াসমীন