
Mojaru
জান্নাতুল মাওয়া লাবন্য
জন্মগতভাবেই প্রতিটি শিশুর ব্রেইন অনেকবেশি শক্তিশালী। উপলব্ধি , সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা কিংবা দক্ষতা পারস্পরিকভাবে পুনবির্ন্যাসিত। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের এই ব্রেইনের কার্যক্ষমতা ধীরগতির হয়ে পড়ে। তখন কোনো কিছুর প্রতি দীর্ঘকালীন মনোযোগ আর্কষণটাও আর কার্যকর উপায়ে হয়ে উঠে না।
এর নেপথ্যে বেশকিছু কারণ আছে। যার মাঝে বর্তমান শতাব্দীতে এসে যান্ত্রিকতা অন্যতম। স্মার্টফোন কমবেশি আমরা সকলেই ব্যবহার করি। পুরনো দিনের ড্রয়িংরুমে টিভিসেটের স্থানটা আজ হাতের মুঠোয় ফোনটার দখলে। ঠিক তেমনি আমাদের ব্রেইনটাও ক্রমাগত সে দিকে মোড় নিচ্ছে। কারণ , আমাদের ব্রেইনকে আমরা যেভাবে ডিরেকশন দিচ্ছি তার কাজ সেটাকেই সম্পন্ন করা। তবে আমাদের মস্তিষ্ক অধিকাংশ বিষয়ই ভুলে যায়। সাধারণত প্রতিদিন পাওয়া তথ্য মস্তিষ্ক কয়েক মিনিটের মধ্যে ভুলে যায়। মস্তিষ্ক একই তথ্য নতুন করে পেলে আগের তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে একধরনের গড়পড়তা তথ্য সংরক্ষণ করে। কিন্তু একে স্থায়ী করার উপায় হলো তথ্যটা একসঙ্গে না নিয়ে ধাপে ধাপে নেওয়া এবং বিরতি দিয়ে কিছুদিন পরে আবারও একই কাজ করা। কারণ জোরপূর্বক কিছু শেখা যায় না।
তবে আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রের কথা ভেবে দেখলে কেমন হয়? যেখানে একটা শিক্ষার্থীকে একটা সময় পর পড়াশোনার ধাপ পেরিয়ে ক্যারিয়ারের চিন্তা আনতে হয়!
এগুলো ভাবনার জন্য দরকার পর্যাপ্ত ব্রেইন বিকাশের। ক্যারিয়ার সেক্টরের প্রতিটি ধাপে তাকে প্রমাণ করগে হয় নিজস্ব দক্ষতাকে। আর সাথে দরকার একাগ্রতার। আজকের একাগ্রতা আপনার আগামী দিনের সাফল্যের সোপান। পাশাপাশি প্রয়োজন আত্মবিশ্বাসের। যেটা আপনাকে এগিয়ে দিবে বহুদূর।
সন্তানকে নিয়ে ভালোকিছুর স্বপ্ন দেখেন পৃথিবীর প্রতিটি বাবা-মা। তবে অতিরিক্ত চাপ অথবা জোরজবরদস্তি হিতে বিপরীত ডেকে আনে। আচ্ছা! যদি এমন হতো , পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনের আবশ্যকীয় দক্ষতাকে আনন্দের সাথে শেখা?
হ্যাঁ! ঠিক একইভাবে অনলাইন শিক্ষাগুরুর নিবিড় পর্যবেক্ষণ আপনার শেখাটাও হবে দারুণ। মজারু - অনলাইন ভিত্তিক শিশু-কিশোরদের জন্য শেখা ও জানার এক অভিনবত্ব নিয়ে সাজানো প্রতিষ্ঠান। শুধু কি শেখায় সেরা? আপনার সন্তানের ব্রেইনের ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে এই শিক্ষাগুরু নিয়ে এলো এক অভিনব পন্থা! গণিতের সমাধান নাকি খুঁটিনাটি ধাঁধা? সব প্রশ্নের সমাধান পাবেন সহজ উপায়ে। ধীরগতির শিক্ষনফল আপনার সন্তানকে এক সময় কঠিন বিষয়ও খুব সহজে করে আয়ত্ব করতে পারবে। এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে মজারু’র– ‘অ্যাবাকাস মাইন্ড ম্যাথ’ কোর্সের মাধ্যমে!
এখন প্রশ্ন আসতেই পারে! অ্যাবাকাস কী?
পাটিগাণিতিক গণনা সম্পাদনের একটি প্রাচীণ যন্ত্র হচ্ছে অ্যাবাকাস। যাতে একটি কাঠের ফ্রেমে বসানো তারে লাগানো গুটি উপরে-নিচে সরিয়ে গণনা করা হয়। এই অ্যাবাকাসই কালক্রমে আজকের কম্পিউটারে রূপ নিয়েছে। এই অ্যাবাকাসে সংখ্যা গণনা থেকে শুরু করে যোগ-বিয়োগ কিংবা গুন-ভাগ করা যায়।
কিন্তু কেন এই অ্যাবাকাস?
আজকের বিশ্বে কিন্তু বেসিক ম্যাথ শেখার কোনো বিকল্প নেই। ইঞ্জিনিয়ারিং , মেডিসিন , ল’, বিজনেস কিংবা বিনোদন– সবক্ষেত্রে বেসিক ম্যাথ স্কিল দরকার হয়।
সেই ছোট্ট থেকে হিসাব করার জন্য হাতের কড়া , কাগজ-কলম কিংবা ক্যালকুলেটরের সহায়তা নেই আমরা। যেগুলো ওপর নির্ভরশীলতা আমাদের মস্তিষ্ককে আরও দুর্বল করে ফেলে। কারণ এগুলোতে মাথা খাটাতে হয় না।
অন্যদিকে অ্যাবাকাস রপ্ত করতে পারলে হিসাব পুরোটাই মস্তিষ্কে হয়। এতে মস্তিষ্কের ক্ষমতা আরো বাড়তে থাকবে। গণিত তখন একটা মজা বিষয় মনে হবে। গতি ও একাগ্রতা বাড়বে , মানসিক দক্ষতা বেড়ে যাবে এবং নির্ভুলতা উচ্চ মাত্রায় পৌঁছে যাবে। অ্যাবাকাস এমন একটা মেথড যার মাধ্যমে মাইন্ড ম্যাথ ডেভেলপ হয়ে যাবে।
অ্যাবাকাস মাইন্ড ম্যাথ কোর্সটি একটি সুনিয়ন্ত্রিত মস্তিষ্ক উদ্দীপক প্রশিক্ষণ। যা মস্তিষ্কের ডান ও বাম দিকের পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার নিশ্চিত করে।
এরফলে আপনার শিশুর শ্রবণ , দর্শন , স্পর্শ ও কল্পনা এ চারটি বোধশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আপনার শিশুকে অধিক সৃজনশীল , মেধাবী , মনোযোগী ও আত্মবিশ্বাস করে গড়ে তোলার লক্ষেই মজারু নিয়ে এলো এই আকর্ষণীয় কোর্সটি!
মাইন্ড ম্যাথ ডেভেলপটাই বা কি?
গণিত বেশিরভাগ শিশুদের জন্য একটি কঠিন বিষয় বলে মনে করা হয় , যদিও এটি সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়। যদি সঠিকভাবে শেখা যায়। অ্যাবাকাস গণিত শেখা সেই সময় থেকে গণিতের গণনার আরও ভাল বোঝার দিকে পরিচালিত করে যখন শিশুটি সব দিক থেকে বিকশিত হচ্ছে। অ্যাবাকাস এবং ভিজ্যুয়ালাইজেশনের নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে , শিশু মানসিকভাবে গাণিতিক গণনা করতে অনেক বেশি সক্ষম হয়ে ওঠে।
বুস্টস কনসেনট্রেশন এবং মেমরি সুপরিচিত গবেষকদের মতে , “অ্যাবাকাস প্রশিক্ষণ শিশুদের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বিশেষ করে যখন এটি নিয়মিত অনুশীলন করা হয়। এটা দেখা গেছে যে ছাত্ররা অ্যাবাকাস প্রশিক্ষণ পেয়েছে তাদের উচ্চ স্তরের ঘনত্ব এবং স্মৃতিশক্তি রয়েছে বলে স্বীকৃত।” তাছাড়া , মনের মধ্যে কল্পনা করার হাতিয়ার হিসাবে , এটি স্মৃতিশক্তি উন্নত করতেও সাহায্য করে। লজিক্যাল বোঝার উন্নতি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে , শিশুরা মানসিক হিসাব -নিকাশ করার জন্য একটি অ্যাবাকাসের ছবি স্মরণ করে। যখন তিনি একটি সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন , তিনি জপমালাগুলির চলাচলের উপর ভিত্তি করে যুক্তি প্রয়োগ করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে , মাইন্ড ম্যাথস্ প্রতিদিনের পরিস্থিতিগুলির জন্য যুক্তি বিকাশেও সহায়তা করে।
প্রক্রিয়াটির প্রথম ধাপে একটি শিশু প্রতিদিন রুটিন মেনে ১০ মিনিট করে অ্যাবাকাস দিয়ে হিসাব করবে। অন্তত ৩ মাস অনুশীলন চলবে। তারপর দ্বিতীয় ধাপে সে যন্ত্রটি ছাড়াই মাথা খাটিয়ে হিসাব করা শুরু করবে। অ্যাবাকাস যন্ত্রটি তখন কল্পনায় কাজ করবে। ভাবতেও দারুণ লাগে তাইনা?
আমাদের মস্তিষ্কের দুটি ভাগ আছে। বাম পাশ যেটা মূখ্য বা লজিক্যাল অথবা যুক্তিনিরপেক্ষ কাজগুলো করে থাকে। যেমন : হিসাব করা , কথা বলা , বিশ্লেষণ করা ইত্যাদি। অন্যদিকে ডান পাশের কাজ হচ্ছে– কল্পনা করা , চিন্তা করা , ভিজুয়ালাইজ করা এবং স্মৃতি সংরক্ষণ করা। যখন কোনো শিশু কাগজ-কলমে বা ক্যালকুলেটরে কোনো হিসাব করে তখন শুধুমাত্র মস্তিষ্কের বাম পাশটা কাজ করে। ডান পাশটা পুরোপুরি বিশ্রামে থাকে। কিন্তু অ্যাবাকাস নিয়ে যখন হিসাব করে তখন উভয় পাশ সমানভাবে সক্রীয় হয়ে ওঠে। কারণ , এতে চোখ বন্ধ করে ভিজুয়ালাইজ করতে হয় এবং হিসাবও করতে হয়।
এর ফলে খুব সহজেই ধীরে ধীরে পুরো মস্তিষ্ক সক্রিয় হয়ে ওঠে। একাগ্রতা ও মনোযোগ বাড়তে থাকে। তিন বছরে ৭ গুন বৃদ্ধি পেতে পারে। পাশাপাশি স্মরণশক্তি ও আইকিউ লেভেল দ্রুত বাড়তে থাকে। এবং প্রশ্ন সমাধানের গতি অনেক বেড়ে যায়।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জরিপে দেখা গেছে , সফলতার ৮৮ ভাগ নির্ভর করে সফট স্কিল তথা ব্যক্তিত্ব ও মেধার ওপর এবং মাত্র ১২ ভাগ নির্ভর করে একাডেমিক স্কিলের ওপর। এই সফট স্কিল বাড়ানোর জন্যই অ্যাবাকাসের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী বাড়ছে।
অ্যাবাকাস অনুশীলনে সেভেন ম্যাজিক রুলস ফলো করে একটি শিশুর সফট স্ক্রিল দ্রুত বাড়ানো সম্ভব- এগুলো হলো –
১. প্রতিদিন অনুশীলন
২. টাইমটেবল মেনে চলা
৩. গতির চার্ট সংরক্ষণ
৪. লক্ষ্যে অটল থাকা
৫. শতভাগ প্রচেষ্টা
৬. বন্ধুদের সাথে প্রতিযোগিতা করা
৭. হার না মানা
এভাবে অ্যাবাকাস প্রাকটিস করে মাইন্ড ম্যাথ আয়ত্ব করতে পারলে আপনার সন্তানের জন্য পুরো পৃথিবীর দরজা খুলে যাবে। তথ্য-প্রযুক্তি নাকি ইঞ্জিনিয়ারিং? মেডিকেল এডমিশন অথবা ম্যানেজমেন্ট সাথে সেনাবাহিনী –যে কোনো সেক্টরে আপনার সন্তান এগিয়ে যেতে পারবে খুব সহজেই! একাগ্রতা থেকে আত্মবিশ্বাস , এভাবেই এগিয়ে যাবে আপনার সন্তান। আর এজন্যই মজারু আছে আপনার পাশে। ‘মজারু মানে মজার শিক্ষাগুরু , মজারু মানে মজায় শেখা শুরু!’