
নাবিলা হোসেন জারা
অ্যাবাকাস যারা আয়ত্ব করতে পেরেছে তারা খুব সহজেই গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারে, অংকের প্রতি তাদের ভয় কেটে যায় এবং সহজেই মৌখিকভাবেই যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ করতে পারে। মানসিকভাবে এ অংক করার নাম মানসাঙ্ক। তবে কি অ্যাবাকাস শিশুদের শুধুই গণিত শিক্ষা দেয়?
না অ্যাবাকাস ট্রেনিং-এ যদিও গাণিতিক পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হয় কিন্তু এর নিয়মিত ব্যবহার শিশুর মস্তিষ্কের সার্বিক উন্নতি সাধন করে। একটি শিশুর তখন যা শিখতে চায় তা দ্রুত শিখতে পারে। ধরুন, সে গান শিখতে চায় আবাকাস ট্রেনিংপ্রাপ্ত একজন শিশু অন্যদের চেয়ে দ্রুত একটি গান শিখতে পারবে। জিনিয়াসদের মস্তিষ্কের দুটি অংশই সমানভাবে সক্রিয় থাকে। অ্যাবাকাস মস্তিষ্কের নিউরনগুলো উদ্দীপ্ত করে চারপাশকে সক্রিয় করে বলেই এর ছাত্ররা কয়েকধাপ এগিয়ে থাকে।
অ্যাবাকাস কি?
অ্যাবাকাস পাটিগণিত গণনা সম্পাদনের একটি প্রাচীন যন্ত্র।একটি কাঠের ফ্রেমে বসানো তারে কতগুলো গুটি (বিড)লাগানো থাকে এই বিডগুলোর রয়েছে অবস্থান সাপেক্ষে বিভিন্ন মান। বিটগুলোর বিভিন্ন মাধ্যমে সংখ্যা গণনা মধ্য দিয়ে গণনা কার্যক্রম সম্পাদন করে।
অ্যাবাকাসের ইতিহাস?
যীশু খ্রিস্টের জন্মের প্রায় দুইহাজার সাতশত বছর পূর্বে মেসোপটেমীয় সভ্যতার সর্বপ্রথম অ্যাবাকাসের ব্যবহার হতে দেখা যায়। বিভিন্ন দেশেররয়েছে এর বিভিন্ন নাম যেমন: চীনে বলা হয়- সুয়ানপান (Suanpan); জাপানে- সরোবান (Soroban); রাশিয়ায় বলা হয় শাউটি (Schoty)।
আবাকাসের উপকারিতা
Spilt Brain Theory অনুযায়ী মানব মস্তিষ্ক দুইটি অংশে বিভক্ত বাম অংশ শরীরের ডান অংশকে এবং ডান অংশ' শরীরের বাম দিকের অংশ কে নিয়ন্ত্রণ করে। বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি বলেছেন, ‘গণিত হচ্ছে বিশেষ একটি ভাষা যে ভাষায় সৃষ্টিকর্তা মহাবিশ্ব কে লিখেছেন’।
বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন ‘কল্পনা বিজ্ঞানের চেয়েও শক্তিশালী কেননা বিজ্ঞানের সীমা আছে কিন্তু কল্পনা সীমা নেই’।
শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে অ্যাবাকাস
গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য যখন একটি শিশু অ্যাবাকাস ব্যবহার করবে তখন সে তার মস্তিষ্কের প্রায় সবগুলো অংশ এবং দুইহাত (আঙ্গুলসমূহ )একসাথে ব্যবহার করবে ফলে মস্তিষ্কের দুটি অংশ (Left Hemisphere এবং Right Hemisphere) একে অপরের সাথে মিথস্ক্রিয়া করবে এভাবে একটি নিউরনের সাথে আরেকটি নিউরনের সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তৈরি হবে নতুন নিউরো পাথওয়ে। অধিক সংখ্যক নিউরোপাথওয়ে তৈরির মাধ্যমে মস্তিষ্কের উভয় অংশ একত্রে সক্রিয় হয়ে উঠবে। বিজ্ঞানীরাও এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন যে, অ্যাবাকাসের মাধ্যমে মস্তিষ্কের দুটি অংশ একসাথে কার্যকর করা সম্ভব।
আর একটি শিশু যখন সক্রিয় মস্তিষ্কের অধিকারী হবে তখন তার লেখাপড়া, খেলাধুলা, কাজকর্ম তুলনামূলকভাবে সহজ হয়ে উঠবে এবং সে হবে যে সকলক্ষেত্রে জিনিয়াস।
আবাকাস ব্যবহারের উপকারিতা ও ফলাফল:
১. অধিকতর ও দ্রুত গণনার দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
২. ধৈর্য ও সহনশীলতা বৃদ্ধি করে।
৩. সমস্যা সমাধানে সক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৪. সুস্পষ্ট যৌগিক যুক্তি শেখায়।
৫. মনোযোগ ও পর্যবেক্ষণ তীক্ষ্ণ করে।
৬. আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাবোধ বিকাশ করে।
৭. দৃঢ়তর মানসিক দৃশ্যায়ন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৮. পঠন লিখন দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
৯. শ্রবণ দক্ষতার তীক্ষ্ণ করে।
১০. গণিতকে অর্থবহ কার্যকর ও মজাদার করে তোলে।
অ্যাবাকাস সম্পর্কে এত কিছু জানার পর "অ্যাবাকাস মাইন্ড ম্যাথ" কোর্স না করে থাকতে পারছি না। মজারুকে অনুরোধ করছি কোর্সটি তাড়াতাড়ি আনার জন্য। আমি কোর্সটি করতে উদগ্রীব হয়ে আছি।
বন্ধুরা! তোমরাও কি আমার সঙ্গী হবে?
লেখক: সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী, সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ সিলেট