
Mojaru
স্বপ্ন যখন অলিম্পিয়াড জয়
অলিম্পিক গেমসের সাথে পরিচিত কমবেশি আমরা সবাই। উসাইন বোল্ট কিংবা মাইকেল ফেলেপসদের একের পর এক অলিম্পিক স্বর্ণ জয় আর পত্রিকার পাতা জুড়ে বড় বড় সব ছবি, মনের অজান্তেই আফসোস জাগায় ইশ, কখনো যদি আমিও এমন মেডেল জিততাম! বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিতে পারতাম সবার সামনে। তবে আফসোস, অলিম্পিকের বিশ্বমঞ্চে কেউই এখনও আমাদের সেই কাঙ্খিত স্বর্ণপদক এনে দিতে পারেনি। তবে বিশ্বমঞ্চ থেকে বাংলাদেশের জন্য মেডেল ছিনিয়ে আনার সুযোগ কিন্তু রয়েছে তোমার সামনেও। না, না, ঘাবড়ে যেও না। উসাইন বোল্টের মতো স্প্রিন্টার কিংবা মাইকেল ফেলেপসের মতো সাঁতারু তোমাকে হতে হবে না। একটু চোখ-কান খোলা রাখলে আর নিজের পড়ালেখাকে কাজে লাগিয়েই তুমিও বাংলাদেশের জন্য জয় করে আনতে পারো আন্তর্জাতিক মেডেলসহ আরও অনেক পুরস্কার৷ ভাবছো কীভাবে সম্ভব? বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের মাধ্যমেই তোমার এই স্বপ্ন পূরণ হতে পারে।
ছবি: ২০১৬ সাউথ এশিয়ান গেমসে স্বর্ণজয়ের পর বাংলাদেশি ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্তের এই কান্না আবেগে ভাসিয়েছিলো আমাদের সবাইকে
অলিম্পিয়াড কী?
অলিম্পিয়াড শব্দটি এসেছে মূলত অলিম্পিক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে৷ অলিম্পিয়াড বলতে বোঝানো হয় বৈশ্বিক কোনো প্রতিযোগিতা, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করে। প্রাচীনকালে অলিম্পিয়াড শব্দটা কেবলমাত্র শারীরিক যেকোনো খেলাধুলার ক্ষেত্রেই ব্যবহার হতো। তবে আধুনিক অলিম্পিয়াডের ক্ষেত্রে এই সংজ্ঞাটা পাল্টে গিয়েছে। শারীরিক বিভিন্ন খেলাধুলার পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক বৈশ্বিক যেকোনো প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেও এই অলিম্পিয়াড কথাটি ব্যবহৃত হয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, আন্তজার্তিক গণিত অলিম্পিয়াড, আন্তজার্তিক ভূগোল অলিম্পিয়াড, বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াড, আন্তজার্তিক রোবোটিক্স অলিম্পিয়াড ইত্যাদি।
বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও কিন্তু প্রতিবছরই বিভিন্ন অলিম্পিয়াড আয়োজন করে আসছে। এছাড়াও আন্তজার্তিক অলিম্পিয়াডের বিভিন্ন বৈশ্বিক আসর থেকে পদক ছিনিয়ে আনার দারুণ সব রেকর্ড কিন্তু আছে বাংলাদেশের দখলেও। বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন অলিম্পিয়াডগুলো নিয়ে বিস্তারিত জানবো আমরা কিছুক্ষণ পরেই।
কেন অংশ নেব অলিম্পিয়াডে?
অলিম্পিয়াড কী সে সম্পর্কে না হয় জানলাম। কিন্তু এসব অলিম্পিয়াডে কি কেবলমাত্র পুরস্কার জেতার জন্যই অংশ নেব? উত্তর হচ্ছে 'না।' প্রতি বছর অনুষ্ঠিত এই অলিম্পিয়াডে বয়স অনুযায়ী অই অংশগ্রহণকারীর নির্ধারিত টপিকে দক্ষতা যাচাই করা হয়। অলিম্পিয়াডে সফল হতে হলে অই নির্ধারিত বিষয়ে জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোটা বেশ জরুরী। অর্থাৎ সহজ করে বললে অলিম্পিয়াড তোমাকে পাঠ্যবইয়ের লেখাপড়ার বাইরেও যেকোনো টপিকে অতিরিক্ত জ্ঞানার্জনে সহায়তা করবে। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তোমার নিজের অবস্থান যাচাইয়েরও দারুণ এক সুযোগ এই অলিম্পিয়াডগুলো।
বর্তমানে আমাদের অনেকেরই দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার একটা প্রবণতা থাকে। বিদেশের ভার্সিটিগুলোতে পড়তে গেলে নিয়মিত পড়ালেখার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমও সমানভাবে গুরুত্ব পায়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন অলিম্পিয়াডের সাফল্যগুলো তোমাকে বাইরে পড়তে যাওয়ার জন্য স্কলারশিপ পেতে ককয়েক ধাপ এগিয়ে রাখতে পারে।
কীভাবে অংশ নেব অলিম্পিয়াডে?
আগেই বলেছি বাংলাদেশে প্রতিবছরই বিভিন্ন অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। এসব অলিম্পিয়াডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: গণিত অলিম্পিয়াড, পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, সাইন্স অলিম্পিয়াড, রসায়ন অলিম্পিয়াড, জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড, ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াড, ইতিহাস অলিম্পিয়াড, নিউজপেপার অলিম্পিয়াড ইত্যাদি। প্রতিবছর একটা নির্দিষ্ট সময়ে এই অলিম্পিয়াডগুলো অনুষ্ঠিত হয়। বেশিরভাগ এই অলিম্পিয়াডগুলোই স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্যই আয়োজন করা হয়। সংশ্লিষ্ট স্কুল-কলেজের নোটিশ বোর্ড, সংবাদপত্র, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকেই এই অলিম্পিয়াডগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।
এখন চলো বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কিছু অলিম্পিয়াড সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ছবি : প্রতি বছরই বিভিন্ন আন্তজার্তিক অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ অংশ নিচ্ছে এবং পুরস্কার জিতে আসছে
গণিত অলিম্পিয়াড:
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সবচেয়ে বড় অলিম্পিয়াডটি হলো গণিত অলিম্পিয়াড। গণিত অলিম্পিয়াড গণিত উৎসব নামেও পরিচিত। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এটি আয়োজন করে আসছে। আর প্রধান পৃষ্ঠপোষকের দায়িত্বে থাকে প্রথম আলো ও ডাচ-বাংলা ব্যাংক। মূলত বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে প্রেরণ এবং সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীদের গাণিতিক মেধার উৎকর্ষ সাধন -এই উদ্দেশ্য দু’টিকে সামনে রেখে ২০০২ সাল থেকে গণিত আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়। মুনির হাসানের তত্ত্বাবধানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং দৈনিক প্রথম আলো’র সম্পাদক মতিউর রহমান এই উদ্যোগ নেন। ২০০৫ সালে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ প্রথম অংশগ্রহণ করে। আর ২০১৮ সালে এসে রোমানিয়ায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের ৫৯তম আসরে এসে বাংলাদেশ প্রথম স্বর্ণপদক জয় করে। মূলত প্রতি বছর সারাদেশে আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজন করা হয়। আর এসকল বিজয়ীদের মধ্যে থেকে সেরাদের সেরা বাছাই করে তৈরি হয় আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য বাংলাদেশ দল।
ছবি: ২০১৮ সালে রোমানিয়ায় অনুষ্ঠিত ৫৯তম আন্তজার্তিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র স্বর্ণ জয় করেন চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী
অংশগ্রহণের নিয়মাবলি:
করোনা মহামারীর আগে অলিম্পিয়াডের সবগুলো কার্যক্রম সশরীরেই অনুষ্ঠিত হতো। তবে বিগত কয়েক বছর থেকে গণিত অলিম্পিয়াড চারটি ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথমেই অনলাইন বাছাই। অনলাইনে নিবন্ধন করে শিক্ষার্থীরা বাছাইপর্বে অংশ নেয়। অনলাইন গণিত অলিম্পিয়াডে একটি সংখ্যায় উত্তর দেওয়া সম্ভব, এমন সমস্যা দেওয়া হয়। প্রশ্নপত্রে প্রশ্নের পাশে বক্স থাকে। সেখানে ইংরেজি অঙ্ক ব্যবহার করে উত্তর লিখে সাবমিট করতে হয়। অনলাইন বাছাই গণিত অলিম্পিয়াডে বিজয়ীদের নিয়ে অনলাইন আঞ্চলিক পর্বের আয়োজন করা হয়। তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হয় বিভাগীয় গণিত অলিম্পিয়াড। যেখানে অনলাইন আঞ্চলিক গণিত অলিম্পিয়াডে বিজয়ীরা অংশ নেয়। সর্বশেষ বিভাগীয় পর্বের বিজয়ীদের নিয়ে জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজন করা হয়।
যারা অংশ নিতে পারবে:
চারটি ক্যাটাগরিতে অনুষ্ঠিত হয় গণিত অলিম্পিয়াড। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি বা সমমান এবং স্ট্যান্ডার্ড-৩ থেকে স্ট্যান্ডার্ড-৫–এর শিক্ষার্থীরা প্রাইমারি ক্যাটাগরিতে, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি বা সমমান এবং স্ট্যান্ডার্ড-৬ থেকে স্ট্যান্ডার্ড-৮ জুনিয়র ক্যাটাগরিতে, নবম, দশম শ্রেণি ও এসএসসি পরীক্ষার্থী বা সমমান এবং ও–লেভেল এবং ও–লেভেল পরীক্ষার্থীরা সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে এবং একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী বা সমমান এবং এ–লেভেল ও এ-লেভেল পরীক্ষার্থীরা হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করতে পারে। গণিত উৎসবের নিবন্ধন থেকে শুরু সব খবর পাওয়া যাবে গণিত অলিম্পিয়াডের ওয়েবসাইট, অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ (facebook.com/BdMOC) এবং গ্রুপে (facebook.com/groups/BdMOC)।
ছবি: পরিকল্পনা মাফিক গোছানো প্রস্তুতি তোমাকেও এনে দিতে পারে গণিত অলিম্পিয়াডে কাঙ্খিত সাফল্য
যেভাবে প্রস্তুতি নেবে:
গণিত অলিম্পিয়াডের নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর যে ধরনের সমস্যার সমাধান জানা উচিত, সেই বিষয়ে খেয়াল রেখে প্রশ্ন করা হয়। বিগত বছরের প্রশ্ন দেখে ধারণা পাওয়া যেতে পারে। গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য নিজ শ্রেণির গণিত বইয়ের ওপর দখল থাকতে হবে। দক্ষতার জন্য নিজ বইয়ের সমস্যা সমাধানের কৌশল জানতে হবে। অলিম্পিয়াডের সমস্যাগুলো জ্যামিতি, বীজগণিত, সংখ্যাতত্ত্ব ও গণনাতত্ত্বের ওপরে থাকে। বিগত বছরের প্রশ্ন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা যাবে। প্রস্তুতির জন্য নমুনা হিসেবে নেওয়া এসব প্রশ্ন চর্চা করা যেতে পারে।
এছাড়া বাংলাদেশের অন্যতম ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম মজারু বাংলাদেশে এই প্রথম অনলাইনে গণিত অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি নিতে প্রাইমারি ও জুনিয়র ক্যাটাগরির জন্য নিয়ে এসেছে কোর্স। এই কোর্সগুলো থেকেও ঘরে বসেই ম্যাথ অলিম্পিয়াডের গোছানো প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হবে।
প্রাইমারি ক্যাটাগরির জন্য Math Champs Primary: https://mojaru.com/courses/math-champs-primary
জুনিয়র ক্যাটাগরির জন্য Math Champs Junior: https://mojaru.com/courses/math-champs-junior
পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড:
ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে অলিম্পিয়াড আয়োজন করে বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড কমিটি। যারা ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে, তারা এই অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে পারবে। বাংলাদেশের যেকোনো মাধ্যম ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে। পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে পৃষ্ঠপোষকতা করছে প্রথম আলো ও ডাচ বাংলা ব্যাংক।
অংশগ্রহণের নিয়মাবলি:
করোনা মহামারীর আগে অলিম্পিয়াডের সবগুলো কার্যক্রম সশরীরেই অনুষ্ঠিত হতো। তবে, বিগত বছরগুলোতে প্রথমে তিনটি মডেল টেস্ট নেওয়া হয় এবং বাছাই পরীক্ষা তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রথমে জেলাভিত্তিক পরীক্ষা অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। জেলা পর্যায়ে বিজয়ীদের নিয়ে বিভাগীয় পর্ব সরাসরি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। বিভাগীয় পর্যায়ে বিজয়ীদের নিয়ে হয় জাতীয় পর্ব। জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ীরা ট্রেনিং ক্যাম্পে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকে। পরে তারা আন্তর্জাতিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করতে পারে।
এছাড়াও নিবন্ধনসহ অলিম্পিয়াড সম্পর্কিত অন্যান্য যাবতীয় আপডেট পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে (https://bdpho.org/syllabus) পাওয়া যাবে।
ছবি: পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি তোমাকে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে রাখতে পারে কয়েক ধাপ
যেভাবে প্রস্তুতি নেবে:
ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ১২টি বিষয়ের ওপর প্রশ্ন করা হয়। পরিমাপ, পদার্থের গঠন, বলবিদ্যা, তাপ, চাপ, ভর, আয়তন ও ঘনত্ব, বায়ুমণ্ডল, মহাকর্ষ, শব্দ, চৌম্বকত্ব, বিদ্যুৎ, আলো বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়।
অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ১৩টি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। ভৌতবিজ্ঞান, পরিমাপ, বলবিদ্যা, তরল ও বায়বীয় পদার্থ, তরঙ্গ, শব্দ, তাপ, আলো, তড়িৎ চৌম্বকত্ব, ইলেকট্রনিকস, আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান, শক্তির উৎস ও ব্যবহার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়।
দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ২০টি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। অলিম্পিয়াডের বিস্তারিত সিলেবাস বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া যাবে। এছাড়াও বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের ওয়েবসাইটে বিগত বছরের অলিম্পিয়াডের বিভিন্ন প্রশ্নপত্র সংযুক্ত করা আছে। এ ধরনের প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে অলিম্পিয়াডে কেমন প্রশ্ন হয়, তা সম্পর্কে জানা যাবে।
জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড:
অনূর্ধ্ব ১৫ বছর বয়সের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারে জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান বিষয় থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন থাকে। নির্ধারিত সময়ে আঞ্চলিক পর্বের জন্য নিবন্ধন করতে হয়। এরপর ধাপে ধাপে জাতীয় পর্ব ও ক্যাম্পে অংশগ্রহণের সুযোগ মেলে। এ ছাড়া সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে ই-অলিম্পিয়াড। জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড নিয়ে বিস্তারিত জানা যাবে বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে (bdjso.org) ও তাদের ফেসবুক পেজে (facebook.com/bdjso)। এছাড়া অনুশীলনের জন্য বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় বইয়ের তালিকা, সিলেবাস, আগের বছরগুলোর প্রশ্ন ও সমাধান পাওয়া যাবে।
ছবি: ২০১৮ সালের জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড বিজয়ীরা
রোবোটিক্স অলিম্পিয়াড:
অনূর্ধ্ব ১৮ বছরের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারে রোবোটিক্স অলিম্পিয়াডে। রোবোটিক্স অলিম্পিয়াডে প্রশ্ন থাকে রোবটিক্সের মেকানিক্যাল দিক, গাণিতিক সমস্যা বিশ্লেষণসহ হাতে-কলমে রোবট বানাতে হয়। বিভাগীয় পর্যায়ে আঞ্চলিক পর্বে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে জাতীয় পর্বে থাকার সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। এরপর কয়েকটি ক্যাম্প থেকে বাছাই করা হয় আন্তর্জাতিক দল। রোবোটিক্স অলিম্পিয়াডের বিস্তারিত জানা যাবে আন্তর্জাতিক রোবটিকস অলিম্পিয়াডের ওয়েবসাইট (www.iroc.org), ফেসবুক পেজ (facebook.com/BdRobotOlympiad) ও গ্রুপ (facebook.com/groups/1807908572687836) থেকে। পাশাপাশি রোবোটিক্স অলিম্পিয়াডের নিয়মাবলি ও কর্মশালার খোঁজ পাওয়া যাবে বাংলাদেশ রোবটিকস অলিম্পিয়াডের ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে।
এছাড়াও ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম মজারুর রয়েছে (১২-১৮) বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য Robotics For Juniors কোর্স। এই কোর্সটি রোবোটিক্স অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতিতে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে পারবে। Robotics For Juniors কোর্স লিংক:
ছবি: রোবোটিক্স অলিম্পিয়াডে শিক্ষার্থীদের তৈরি রোবট
ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াড:
২০ বছরের কমবয়সী হাইস্কুল ও কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারে ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াডে। ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াডে প্রশ্ন থাকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে বিশ্লেষণধর্মী গাণিতিক সমস্যা সমাধান, সি/সি++ প্রোগ্রামিং ভাষা থেকে। অনলাইন নিবন্ধনের মাধ্যমে অংশ নিতে হয় ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াডের বিভাগীয় পর্যায়ে। সেখান থেকে সেরা দলগুলো জাতীয় আয়োজনে (বিডিওআই) সুযোগ পায়। বিডিওআইয়ের ফলাফল, বিভিন্ন বাছাই পরীক্ষা এবং অনলাইনে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় ফলাফলের ভিত্তিতে বাছাই করা হয় সেরা ৪ জন প্রতিযোগীকে। ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াড সম্পর্কিত বিস্তারিত জানা যাবে বিডিআইওর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট (olympiad.org.bd) ও ফেসবুক পেজে (facebook.com/BdOIOfficial)।
ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতির জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে গাণিতিক সমস্যা সমাধানের অনুশীলন করতে হবে। গণিতের মৌলিক বিষয়গুলো চর্চা করতে হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় আরও টিউটোরিয়াল, বইয়ের নাম পাওয়া যাবে বিডিআইওর ওয়েবসাইটে (olympiad.org.bd)। এ–সংক্রান্ত অসংখ্য তথ্য-উপাত্ত এখন ইন্টারনেটে পাওয়া যায়।
ছবি: ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াডের বিজয়ীদের সাথে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল
আর্থ অলিম্পিয়াড:
অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সের অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারে আর্থ অলিম্পিয়াডে। আর্থ অলিম্পিয়াডে প্রশ্ন থাকে ভূতত্ত্ব, আবহাওয়াবিজ্ঞান, সমুদ্রবিদ্যা, ভূকেন্দ্রীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং পরিবেশবিজ্ঞান থেকে। বিভাগীয় পর্যায়ে অনলাইন নিবন্ধনের মাধ্যমে আর্থ অলিম্পিয়াডের প্রাথমিক বাছাই হয়। এই পর্বে বিজয়ীরা নির্বাচিত হয় জাতীয় পর্বের জন্য। জাতীয় পর্বের বিজয়ীদের নিয়ে কয়েক ধাপের ক্যাম্প শেষে নির্বাচন করা হয় আন্তর্জাতিক দলের সদস্য। আর্থ অলিম্পিয়াড সম্পর্কিত খবরাখবর ও প্রয়োজনীয় বইপত্র পাওয়া যাবে ন্যাশনাল আর্থ সায়েন্স অলিম্পিয়াডের ওয়েবসাইট (byei.org/neo) ঠিকানায়। এ ছাড়া চোখ রাখতে পারো ন্যাশনাল আর্থ সায়েন্স অলিম্পিয়াডের ফেসবুক পেজে (facebook.com/EarthOlympiad)।
আর্থ অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় বইপত্র পাওয়া যাবে ন্যাশনাল আর্থ সায়েন্স অলিম্পিয়াডের ওয়েবসাইটে। এছাড়া পূর্ববর্তী সমস্যার সমাধান ও পরামর্শ পাওয়া যাবে ন্যাশনাল আর্থ সায়েন্স অলিম্পিয়াডের ফেসবুক পেজে।
জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড:
২০ বছরের কম বয়সী ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারে জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে। জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে প্রশ্ন থাকে কোষতত্ত্ব ও প্রাণরসায়ন, উদ্ভিদ অঙ্গসংস্থান ও শারীরতত্ত্ব, প্রাণী অঙ্গসংস্থান ও শারীরতত্ত্ব, জিনতত্ত্ব ও জৈব অভিব্যক্তি, প্রাণী আচরণবিদ্যা, বাস্তুসংস্থান, বায়োসিস্টেমেটিকস ও বায়োইনফরমেটিকস থেকে। অনলাইন নিবন্ধনের মাধ্যমে আঞ্চলিক পর্যায়ে উত্তীর্ণ হলে পরবর্তী ধাপ, অর্থাৎ জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়া যায়। এভাবে মোট পাঁচটি ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়ার সুযোগ মেলে। উল্লেখ্য, প্রথম তিনটি ধাপ শুধু তত্ত্বীয়, চতুর্থ ধাপ (জাতীয় বায়োক্যাম্প) শুধু ব্যবহারিক এবং পঞ্চম ধাপ (বর্ধিত বায়োক্যাম্প) হলো তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিকের সমন্বয়। জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড সম্পর্কিত খবরাখবর ও প্রয়োজনীয় বইপত্র পাওয়া যাবে বায়োলজি অলিম্পিয়াডের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট (www.borg), ফেসবুক পেজ (www.facebook.com/borg) ও ফেসবুক গ্রুপ (www.facebook.com/groups/bmail) থেকে।
জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতির জন্য পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি জাতীয় বা তার পরবর্তী পর্যায়ের জন্য ক্যাম্পবেল বায়োলজিসহ বিভিন্ন উচ্চতর পাঠ্যবই অনুসরণ করতে হবে। প্রস্তুতির জন্য আরও বইয়ের তালিকা ও বিগত বছরগুলোর সমস্যা ও সমাধান পাওয়া যাবে বাংলাদেশ বায়োলজি অলিম্পিয়াডের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে।
উল্লেখিত অলিম্পিয়াডগুলো ছাড়াও বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আরও বেশ কিছু অলিম্পিয়াড প্রতিবছর আয়োজন করে যাচ্ছে। অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামনে উন্মোচিত হতে পারে সম্পূর্ণ এক নতুন জগত। পাঠ্যবইয়ের পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেকে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের জন্য তৈরি করার এক দারুণ সুযোগ এই অলিম্পিয়াডগুলো৷